গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন - গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথা হলে করণীয়

প্রিয় পাঠকবৃন্দ আসসালামু আলাইকুম। আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন। আজকের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন ও গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথা হলে করণীয় কি? প্রতিটা নারীদের জীবনে সমলোচনামূলক সময় হচ্ছে গর্ভকালীন পুরো সময়টি। গর্ভাবস্থার সময়টি যেমন সমালোচনা মূলক ঠিক তেমনি সংবেদনশীল। এজন্য প্রতিটা গর্ভবতী মহিলার দায়িত্ব গর্ভকালীন সময়ে ছোটখাটো যেগুলো খুঁটিনাটি বিষয় রয়েছে সেগুলো সঠিকভাবে জেনে রাখা।
গর্ভকালীন সময়ে প্রায় অনেকেরই প্রশ্ন থাকে যে গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন এবং গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথা হলে করণীয় কি? তাই আপনাদের সুবিধার্থে আজকের পোস্টে এই সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানিয়ে দিব। আশা করছি, এই পোস্টের মাধ্যমে এই প্রশ্নের যাবতীয় তথ্য পেয়ে যাবেন।

পোষ্ট সূচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন - গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথা হলে করণীয়

  • ভূমিকা
  • গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন
  • গর্ভাবস্থায় পেটের বাম পাশে ব্যথা হওয়ার কারণ
  • গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথা হলে করণীয়
  • প্রারম্ভিক গর্ভাবস্থায় পেটের খিঁচুনি
  • গর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হয় কেন
  • লেখকের শেষকথা

ভূমিকা

সম্মানিত পাঠক গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন? এবং গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথা হলে করণীয় কি? এই সম্পর্কে জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরী। কারণ, গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন ধরনের অসুবিধা বা সমস্যাগুলো পরিপূর্ণভাবে জানা থাকলে তবে এই সম্পর্কে সচেতন হওয়া সম্ভব। আর যখনই একজন মহিলা  গর্ভকালীন সময়ে তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকবে তখনই তার গর্ভের সন্তান সুস্থ ভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ পাবে। গর্ভকালীন সময়ে স্বাস্থ্য সচেতন অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।

আজকের পোস্টে গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন এবং গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথা হলে করণীয় কি? এই বিষয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় পেটের বাম পাশে ব্যথা হওয়ার কারণ, প্রারম্ভিক গর্ভাবস্থায় পেটের খিঁচুনি, কনসিভ করলে কি পেটে ব্যথা হয় ইত্যাদি সম্পর্কেও আলোচনা করেছি

আপনি যদি এসকল বিষয়ে জেনে না থাকেন, তাহলে পুরো পোষ্টটি একেবারে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত করার অনুরোধ রইলো। তাহলে চলুন, আর বেশি কথা না বাড়িয়ে গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন? আমরা প্রথমে এই বিষয়ে জেনে নিব।

গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন

গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হওয়াটা স্বাভাবিক। কারণ এ সময় তলপেটে ব্যথা হওয়া একেবারে সাধারণ লক্ষণ। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না যে গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন? গর্ভকালীন সময়ে মহিলাদের দেহের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন ঘটতে দেখা যায়। যার ফলে পেটে ব্যথা হওয়াটা অস্বাভাবিক বিষয় নয়। গর্ভকালীন সময়ে তলপেটে ব্যথা হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে সেগুলো নিম্নে দেওয়া করা হলো।

কোষ্ঠকাঠিন্যতা: গর্ভাবস্থায় মহিলাদের সাধারণ সমস্যা হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্যতা। প্রায় অধিকাংশ মহিলাদের সমস্যা হতে দেখা যায়। গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যতার অন্যতম কারণ হচ্ছে হরমোনের তারতম্যতা। এছাড়াও এই সময়ে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার না খাওয়া, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করা মানসিক চাপ ইত্যাদি। গর্ভাবস্থায় এগুলো কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার সম্মুখীন হতে দেখা যায়। আর এই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকেই তলপেটে ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে।

জরায়ু বড় হওয়া: মহিলারা গর্ভবতী হওয়ার পরে সময়ের সাথে সাথে ভ্রুনের বৃদ্ধির বিকাশ ঘটে, যার ফলে জরায়ু প্রসারিত হয়। স্বাভাবিক পর্যায়ে মহিলাদের জরায়ু ৬ সে.মি. হয়ে থাকে, কিন্তু গর্ভকালীন সময়ে জরায়ুর আকার বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং শেষ পর্যায়ে প্রায় ৪০সে.মি. পর্যন্ত আকার ধারণ করে। গর্ভকালীন সময়ে জরায়ু বড় হওয়ার ফলে তলপেটে ব্যথা অনুভব হয়। এছাড়াও গর্ভ অবস্থায় তলপের ব্যথা হওয়ার আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে ইউটেরাস বড় হওয়া।

ইউরিন ইনফেকশান: গর্ভবতী মহিলাদের মূত্রনালীর সংক্রমণ (Urinary tract infection) একটি সাধারণ সমস্যা বলা যায়। গর্ভকালীন সময়ে অধিকাংশ মহিলাদের মূত্রণালীর সংক্রমণ হয়ে থাকে। কারণ হচ্ছে এ সময়ে মানবদেহের বিভিন্ন ধরনের হরমোনের পরিবর্তন ও নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়। এমতাবস্থায়ী মূত্রনালীতে সহজে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে।

গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন কারণে মূত্রনালীতে সংক্রমণ জরায়ুর বৃদ্ধির পাওয়ার কারণে মূত্রথলিতে চাপ পড়াসহ আরো অন্যান্য কারণে গর্ভাবস্থায় মূত্রনালীর সংক্রমণের সমস্যা সৃষ্টি হয়। আর আমরা জানি মূত্রনালীতে সংক্রমণ দেখা দিলে সেখানে থেকে প্রস্রাবের সময় জ্বালা ও তলপেটে ব্যথা অনুভব হয়।

লিগামেন্টে টান: মানবদেহের গিরা এবং হাড়গুলো একে অপরের সাথে সংযুক্ত করার জন্য সুতোর মতো কিছু টিস্যু থাকে এই টিস্যুগুলো লিগামেন্ট হিসেবে পরিচিত। গর্ভকালীন সময়ে জরায়ু বড় হওয়ার কারণে এর আশেপাশের লিগামেন্ট গুলোর ওপরে বেশ ভালো চাপ পড়ে এবং এগুলো পুরু হয়ে যায় , যার ফলে অনেক সময় দেখা যায় সেই লিগামেন্ট গুলো টান পড়ে এইজন্য তলপেটে ব্যথা , টান লাগা অথবা খোঁচা লাগার মতো অনুভূত হয়ে থাকে।

পেটে অ্যাসিডিটি: গর্ভাবস্থায় শরীরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ধরনের হরমোনাল নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়। যার ফলে মহিলাদের দেহে প্রোজেস্টেরন (Progesterone ) হরমোন স্বাভাবিকের তুলনায় এর মাত্রা অনেকাংশে বেড়ে যায় যার কারণে ডাইজেস্টিভ (Digestive) সিস্টেমে প্রেসার পড়ে।

গর্ভাবস্থায় মহিলাদের শরীরে হরমোনসহ আরও অন্যান্য পরিবর্তনের কারণে হজম প্রক্রিয়ার উপর নির্দিষ্টভাবে প্রেসার পড়ে। যার ফলে হজমের প্রক্রিয়াগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে সক্ষম হয় না। এ কারণে  গর্ভবতী মহিলারা যেসব খাবারগুলো খেয়ে থাকে সেগুলো ভালোভাবে হজম হতে চায় না।

এবং পেটেরর মধ্যে এসিডিটি সৃষ্টি হয়। আর সেই অবস্থায় অনেক ক্ষেত্রে তলপেটে ব্যথা হয়। অতএব, হয়তো আপনি বুঝতেই পারছেন হজম প্রক্রিয়া যদি দুর্বল হয়ে যায় তাহলে গর্ভাবস্থায় পেটের মধ্যে এসিডিটির কারণে তলপেটে ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে।

শিশুর বৃদ্ধি: গর্ভের সন্তান সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বড় হওয়ার কারণে জরায়ু বড় হয়ে যাওয়া ও সন্তান বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ওজন বেড়ে যাওয়ার জন্য মূত্রথলিতে (Urinary Bladder) প্রেসার পড়ে। মূত্রথলিতে প্রেসার পড়ায় অনেক সময় প্রস্রাব ভালোভাবে হয় না। যার ফলে, পেটে ব্যথা করে। সাধারনত গর্ভের সন্তান শারীরিক ওজন বাড়ার কারণে শরীরের তলপেট ভাড়ি বা ব্যথা করে।

গর্ভাবস্থায় পেটের বাম পাশে ব্যথা হওয়ার কারণ

প্রতিটা মহিলারাই গর্ভাবস্থায় পেটের বাম পাশে ব্যথা হওয়ার কারণ জানতে চাই। গর্ভকালীন সময় প্রায়ই পেটের বাম পাশে ব্যথা হওয়ার ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। গর্ভের শিশু মায়ের পেটে বড় হওয়ার সাথে সাথে আরও বেশি জায়গা নিয়ে থাকে। যার ফলে গর্ভের আশেপাশের অঙ্গগুলি এবং কাঠামো স্থানচ্যুত করে।

এছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে শিশুর নড়াচড়ার কারণেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে। শিশু মায়ের পেটে বা গর্ভে থাকাকালীন লাথি মারে, এমতবস্তায় মায়ের গর্ভের অঙ্গগুলো সংকুচিত হয়। মায়ের দেহটি গর্ভের সন্তানকে আরো বেশি জায়গা দিতে হয় যার ফলে পেশিগুলো এবং লিগামেন্ট কাঠামো প্রসারিত হয়।

তবে এছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে মানবদেহের বাম দিকে ব্যথা হওয়ার অন্যান্য কারণও হইতে পারে। যদি গর্ভবতী মহিলাদের ব্যথা প্রায়শই হয়েই থাকে অথবা ব্যথা খুব বেশি তীব্র হয় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নিতে হবে। এবার চলুন, গর্ভাবস্থায় পেট ব্যাথা হলে করণীয় কি সেই সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথা হলে করণীয়

গর্ভকালীন সময়ে তল পেটে ব্যথা হওয়াটা কোন অস্বাভাবিক কারণ নয় বটে কিন্তু এই সময়টি যেহেতু অত্যন্ত সমালোচনামূলক এবং সংবেদনশীল তাই এ সময়ে কোন ধরনের সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে। আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যেই উপদেশ দিবেন সেই মোতাবেক চলতে হবে।

গর্ভকালীন সময়ে বা গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথা বা তলপেটে ব্যথা জনিত সমস্যা যে কারণেই হোক না কেন সেই সময় তাড়াহুড়া করে কোন ধরনের মেডিসিন অথবা পেইন কিলার সেবন করা যাবে না। কোনো ধরনের মেডিসিন বা পেইন কিলার সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

কারণ এই সংবেদনশীল সময়ে এসে যদি আপনি নিয়ম না মেনে মেডিসিন সেবন করেন অথবা আপনার সমস্যার তীব্রতা অনুযায়ী মেডিসিনের ডোজ বেশি হয়ে গেলে, আপনার গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। আবার অনেক সময় গর্ভপাতের (miscarriage) মত ঘটনা ঘটতে পারে।

গর্ভাবস্থায় পেটে ব্যথা হলে সর্বপ্রথম তাকে যেই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে সেটি হচ্ছে খাদ্যাভাসের পরিবর্তন করা। কেননা আপনারা হয়তো সকলেই জানেন যে গর্ভকালীন সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করা, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার কম খাওয়ার কারণে পেটের মধ্যে এসিডিটি সৃষ্টি হওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডিহাইড্রেশন ইত্যাদি এ জাতীয় সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আর এসব সমস্যার কারণেই পেট ব্যথার উদ্ভাবন হতে পারে। এজন্য গর্ভবস্থায় পেটে ব্যথা কমাতে বা নিরাময় করতে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। যদি মূত্রনালীর সংক্রমণ (Urinary tract infection) হয়ে থাকে তখনো পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত।

কেননা এ সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে ব্যাথার মাত্রা কম হওয়ার পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণও কম হবে। অনেক সময় দেখা যায় লিগামেন্ট গুলো যখন প্রসারিত হয়ে জরায়ুকে সমর্থন করে ঠিক তখন তলপেটে টান লাগার মত ব্যথা অনুভূত হয়। এমতবস্থায় ব্যথা হ্রাস করার জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে, ধীরে ধীরে হাঁটাচলা হবে, ওঠা-বসা করতে হবে।

এবং হাঁচি কাশি দেওয়ার সময় হাত তলপেটে রাখতে হবে। এছাড়াও  চিকিৎসকরা গর্ভকালীন সময়ে পেট ব্যথা করলে সামান্য কুসুম গরম পানি পান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এতে করে  ব্যথার তীব্রতা অনেকটাই নিরাময় হয়ে যাবে। মূল কথা বলতে গেলে গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথা সম্পূর্ণভাবে বা স্থায়ীভাবে ভালো করার কোন সমাধান নেই।

তবে এ সময়ে পেতে ব্যথা নিরাময় করার জন্য যতটুকু সম্ভব খাবারের সতর্ক থাকা, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এবং গর্ভকালীন সময়ে যেগুলো নির্দিষ্ট ব্যায়াম ব্যায়াম রয়েছে এগুলোর সাহায্যে পেট ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সুতরাং এই বিষয়গুলো অবহেলা না করে দ্রুত উপযুক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ব্যথার নিরাময় করার জন্য চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

প্রারম্ভিক গর্ভাবস্থায় পেটের খিঁচুনি

অধিকাংশ গর্ভবতী মহিলারা তাদের প্রারম্ভিক পর্যায়ের গর্ভকালীন সময়গুলোতে পেটের খিঁচুনি অনুভব করে থাকেন। অন্যান্য যেসব ক্ষেত্র রয়েছে সেগুলো ক্ষেত্রের মতো, পেটের মধ্যে হালকা খিঁচুনি হওয়াটা একেবারেই স্বাভাবিক এবং এটি কোন উদ্বেগের কারণ নয়। গর্ভকালীন সময়ে প্রারম্ভিক দিনগুলোতে  পেটের খিঁচুনির স্বাভাবিক বা সাধারণ কারণগুলো নিম্নে দেওয়া হলো:

সহবাসের সময় অত্যাধিক উত্তেজনার পরে, অনেক সময় মহিলাদের খিঁচুনি অনুভূত হতে পারে। গর্ভের যে দেওয়াল রয়েছে সেখানে ভ্রূণ রোপিত হলে অন্য পরিমাণ রক্তপাতের সাথে খিঁচুনি হয়। আবার গর্ভের সন্তানকে জায়গা দেওয়ার জন্য ভ্রুণের আকার পরিবর্তন হলেও খিচুনি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

গর্ভাবস্থার ১২ সপ্তাহ পর মহিলাদের কুঁচকির উভয় পার্শ্বে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে, বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলা যখন দাঁড়িয়ে থাকেন ও তার দেহকে প্রসারিত করেন। এটির প্রারম্ভিক কারণ হচ্ছে গর্ভকে সমর্থন দেওয়া এবং লিগামেন্টের প্রসারিত হওয়া।

সাধারণত গর্ভকালীন সময়ে ঘটতে থাকা বেশিরভাগ পেটের খিঁচুনিগুলোকে পিরিয়ডের ব্যথার মতো বা বেশি বুকজ্বালা করার মতো লাগে। তবে প্রারম্ভিক গর্ভকালীন সময়ে পেটের খিঁচুনি দেখা দিলে অবশ্যই আপনার ধাত্রী বা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞকে এই বিষয়ে জানাতে হবে। আশা করছি, বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। এবার চলুন, কনসিভ করলে কি পেটে ব্যথা হয়? এই প্রশ্নের উত্তর জেনে নেব।

গর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হয় কেন

সাধারনত গর্ভাবস্থায় জরায়ু বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে প্রথম ও দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের সময় স্বাভাবিক ভাবে পেট শক্ত হয়। এছাড়া, সন্তান প্রসবের কারণে তৃতীয় ত্রৈমাসিকের সময় পেট শক্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। কিন্তু, গর্ভের সন্তান বড় হয় সাথে সাথে গর্ভবতী মহিলারা পেটের টান টান অনুভব করতে পারে  এজন্য সেই সময়ে মনে হবে যে পেট শক্ত হয়ে আছে। আবার অনেক সময় সন্তান প্রসবের পরে এর শক্ত হয় তাই সেই সময় এই বিষয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই।

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রথম ত্রৈমাসিকে পেট শক্ত হয়ে যাওয়াটা অনেকটা গর্ভপাতের লক্ষণ হয়ে দাঁড়ায়। যদিও এটা নির্দিষ্ট লক্ষন হিসেবে বিবেচিত নয়। তবে এই সময়ে প্রতিনিয়ত গর্ভাবস্থার চিকিৎসা করানো উত্তম। মা ও সন্তানের সুস্থতার জন্য নিয়মিত চিকিৎসা করাটা অনেক জরুরি। পরিশেষে বলা যায়, গর্ভকালীন সময়ে পেট শক্ত হওয়াটা একেবারেই স্বাভাবিক সুতরাং এই নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই।

গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথা কি সবার হয়?

গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথা হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে , প্রতি ১০ জন গর্ভবতী মহিলার মধ্যে ৮ জনেরই গর্ভাবস্থায় পেটব্যথা হয়ে থাকে। বিশেষত গর্ভকালীন সময়ের প্রথম ২০ সপ্তাহে কোনো না কোনো সময় পেট ব্যথা দেখা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গর্ভকালীন  বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ব্যাথা উপশম হতে থাকে।

তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে পেট ব্যথার সাথে অন্যান্য বিভিন্ন জটিলতার কারণে ৩০ শতাংশ গর্ভবতী মহিলার গর্ভপাত হয়ে থাকে। এজন্য  তীব্র পেটে ব্যথা ও অবিরাম পেট ব্যথার ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। কোনো ধরনের তীব্র ও অবিরাম পেট ব্যথায় যত দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

লেখকের শেষকথা

গর্ভকালীন সময়ে পেট ব্যথার তীব্রতা যদি অতিমাত্রায় হয়ে থাকে, তাহলে এই ব্যাপারটি স্বাভাবিকভাবে না নিয়ে প্রাথমিক পর্যায় থেকে সচেতন হতে হবে। কেননা, গর্ভকালীন সময়ে সামান্য অসচেতন হলে বড় কোন ধরনের বিপদের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। তাই গর্ভবতী মায়েদের উচিত গর্ভকালীন সময়ে প্রতিটা পদক্ষেপে সচেতন হওয়া। 

আশা করছি, আপনারা এতক্ষণে গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন - গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথা হলে করণীয় কি সেটি জানতে ও বুঝতে পেরেছেন। আশা করি, আপনারা উল্লেখিত বিষয়ে জেনে উপকৃত হয়েছেন। আপনি যদি এই পোষ্টের কোন অংশ বুঝে না থাকেন, তাহলে এই পোষ্টের কমেন্ট সেকশনে জানিয়ে দিবেন। তাহলে, আমরা সেই অংশটুকু ভালোভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।

গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন - গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথা হলে করণীয় সম্পর্কিত আমাদের এই পোষ্টটি আপনার যদি পছন্দ হয়ে থাকলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। এতে অন্যরাও উল্লিখিত বিষয়গুলো জানতে পারবেন। এতে তারাও উপকৃত হতে পারবেন। এ ধরণের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য পেতে এবং আরও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকার অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ।

Share this post (এই পোস্ট শেয়ার করুন)

See previous post (আগের পোস্ট দেখুন) See next post (পরবর্তী পোস্ট দেখুন)
No one has commented on this post yet (কেউ এখনও এই পোস্টে মন্তব্য করেনি)
Click here to comment (মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন)

Comment in accordance with Help Crown's Privacy Policy. Every comment is reviewed.

Help Crown - গোপনীয়তা নীতি অনুসারে মন্তব্য করুন। প্রতিটি মন্তব্য পর্যালোচনা করা হয়.

comment url