দাউদ রোগের ৫টি ঘরোয়া চিকিৎসা - দাদ রোগের লক্ষন

প্রিয় পাঠকবৃন্দ আসসালামু আলাইকুম। আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন। দাদ বা দাউদ রোগটি আমাদের সকলের কাছেই পরিচিত। দাউদ এক ধরনের ছত্রাকজনিত (fungal) অস্বস্তিকর চর্মরোগ। এই রোগ থেকে কে না মুক্তি পেতে চাই। তাই আমাদের আজকের আজকের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে দাউদ রোগের ৫টি ঘরোয়া চিকিৎসা - দাদ রোগের লক্ষন।

আপনি যদি দাউদ রোগের ৫টি ঘরোয়া চিকিৎসা - দাদ রোগের লক্ষন জেনে থাকেন, তাহলে এই সম্পূর্ণ পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। এছাড়াও এই পোস্টে আমরা দাদ রোগ কীভাবে ছড়ায়, শরীরের কোন কোন স্থানে দাদ রোগ হয়, দাদ হলে যা যা করবেন, যা যা করবেন না সেই সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আশা করছি, য়াপনার উপকারে আসবে।

পোষ্ট সূচিপত্রঃ দাউদ রোগের ৫টি ঘরোয়া চিকিৎসা - দাদ রোগের লক্ষন

  • ভূমিকা
  • দাদ বা দাউদ কি
  • দাদ রোগের লক্ষন
  • দাদ কেন হয় বা দাদ হওয়ার কারণ
  • শরীরের কোন কোন স্থানে দাদ রোগ হয়?
  • দাদ রোগ কীভাবে ছড়ায়?
  • দাউদ রোগের ৫টি ঘরোয়া চিকিৎসা
  • দাদ হলে যেসব খাবার খাওয়া যাবে না
  • দাদ রোগে যা যা করবেন
  • দাদ রোগে যা যা করবেন না
  • দাদ রোগের জটিলতা কি
  • যেসব ক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে যাওয়া জরুরি
  • দাদ সারাতে স্টেরয়েড মলম বা ক্রিম ব্যবহার করা যাবে?
  • দাউদের সবচেয়ে ভালো মলম কোনটি
  • দাউদের সবচেয়ে ভালো সাবান বা শ্যাম্পুর নাম ও দাম
  • লেখকের শেষকথা

ভূমিকা

পা থেকে মাথা পর্যন্ত শরীরের যেকোন স্থানে দাদ হতে পারে। এই রোগে আপনি যত দ্রুত চিকিৎসা নিতে পারবেন, তত তাড়াতাড়ি এই রোগ থেকে মুক্তি পাবেন। এই অস্বস্তিকর ও বিরক্তিকর রোগ থেকে সকলেই রেহাই পেতে চাই।

প্রিয় পাঠক, আপনি যদি দাদ রোগের লক্ষন, কেন হয় ও দাউদ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে না থাকেন, তাহলে গুরুত্ব সহকারে পুরো পোস্টটি শুরু থেকে একেবারে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। তাহলে আসুন, আর বেশি কথা না বাড়িয়ে প্রথমে দাদ সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেই।

দাদ বা দাউদ কি

দাদ হলো এক ধরনের ছত্রাক জনিত রোগ যা রিংওয়ার্ম (Ringworm), ডার্মাটোফাইট (Dermatophytes) নামক ছত্রাক সংক্রমণের কারণে হয়। মূলত এই রোগের আক্রান্ত জায়গায় অনেক পরিমাণে চুলকায়। এই রোগটি মানবদেহের বিভিন্ন স্থানে হয়ে থাকে যেমন বগলে, নাভিতে, মাথায়, নখে, শরীরের বিভিন্ন কুচকিতে ইত্যাদি। তবে এই রোগটি বেশিরভাগ শরীরের ভাজযুক্ত স্থানে বেশি হয়।

সাধারনত এই রোগটি দেখতে অনেকটা গোলাকৃতির লালচে দানাযুক্ত হয়ে থাকে। বর্তমানে এই রোগটি প্রায় বেশিরভাগ মানুষেরই হচ্ছে। এর একটি প্রাথমিক পর্যায়ে সীমিত আকারে দেখা দিল যদি এর সঠিক সময়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহন না করা হলে ধীরে ধীরে এর রোগটি অনেক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

আর এই রোগটি একবার জটিল হয়ে গেলে সহজেই এই রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যায় না। তাই যদি দাউদের সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন থাকে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এবার আসুন, দাদ রোগের লক্ষন কি সেই বিষয়ে জেনে নেই।

দাদ রোগের লক্ষন

দাদ বা দাউদের প্রধান উপসর্গ হচ্ছে র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি। সাধারনত এই র‍্যাশটি দেখতে অনেকটা আংটির মতো গোল আকৃতির হয়ে থাকে। তবে রোগীর ত্বকের বর্ণভেদের কারণে এটি কখনও কখনও রূপালি দেখাতে পারে। আবার আশেপাশের ত্বকের চেয়ে হালকা গাঢ় বর্ণও ধারণ করে থাকে।

দাউদ রোগে মানবদেহের ত্বকের বর্ণ পরিবর্তনের পাশাপাশি ফুসকুড়ির উপরিভাগে ছোটো ছোটো গোলাকৃতি লালচে দানাযুক্ত হয়। এ ছাড়া আক্রান্ত স্থানে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে-
  • আক্রান্ত স্থানের ত্বক কিছুটা শুকনো বা খসখসে হয়ে যাওয়া
  • দাদ বা দাউদ রোগে আক্রান্ত হলে ত্বকের সেই স্থানে প্রচুর পরিমাণে চুলকায়
  • আক্রান্ত স্থানটি ফুলে যাওয়া
  • যাদের মাথায় দাউদ হয় তাদের আক্রান্ত স্থানে চুল পড়ে যায়
  • আক্রান্ত ত্বকের উপর লোম থাকলে সেগুলো পড়ে যাওয়া
  • আক্রান্ত স্থানে খুব বেশি চুলকানোর ফলে চামড়া উঠে দাঁত থেকে কাঁচা রস বের হয়।
উল্লেখিত লক্ষণগুলো যখন আপনি দেখতে পাবেন, তখন বুঝে নিতে হবে আপনার দাদ হয়েছে। তখন যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা করাতে হবে। তা নাহলে দেরি করলে আরও বেশি জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে হতে পারে। এবার চলুন, দাউদ কেন হয় বা দাউদ হওয়ার কারণ কি সেটি জেনে নেই।

দাদ কেন হয় বা দাদ হওয়ার কারণ

জেনে রাখা ভালো যে দাদ এক ধরণের ছত্রাকজনিত ছোঁয়াচে রোগ। এই রোগটি কেন হয় বা হওয়ার কারণ কি এই বিষয়টি অনেকেই জানতে চায়। এই রোগটি হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে যেমন-
  • দাদ সাধারণত ছত্রাক (Fungal) নামক ভাইরাসের কারণে হয়। মূলত শরীরের যেসব স্থানে আলো বাতাস পৌঁছাতে পারে না এবং স্যাঁতসেঁতে ও ভেজা জায়গাগুলোতে এই ছত্রাক নামক ভাইরাসটি জন্ম নিতে থাকে।
  • কোন ব্যক্তির এলার্জি থাকলে এবং বেশি বেশি মোটা জামা কাপড় পরিধান করলে, নোংরা থাকলে এই রোগটি হওয়ার লক্ষন হতে পারে।
  • অপরিষ্কার জামা কাপড় পরিধান করলে, অপরিষ্কার থাকলে অথবা আটসাট অন্তর্বাস ব্যবহার করার ফলে এই রোগটি হতে পারে।
  • আবার গরমে একই কাপড় দীর্ঘদিন ধরে বার বার না ধুয়ে ব্যবহার করলে কিংবা অপরিষ্কার কাপড় পড়লে এই রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
  • দাদ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির যদি গামছা, তোয়ালে, জামাকাপড়, ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় তাহলে এই রোগটি হতে পারে।
  • এছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তির মাথার চিরুনি ও পায়ের মোজা দ্বারাও এই রোগ সংক্রমিত হতে পারে।
  • যেসব ব্যক্তিদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম এবং শরীর প্রচুর পরিমাণে ঘেমে থাকে তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
এছাড়াও এই রোগটি পোষ্য প্রাণী যেমন ( বিড়াল ও কুকুর) থেকেও হয়ে থাকে ইত্যাদি। আশা করছি, দাউদ কেন হয় বা দাউদ হওয়ার কারণগুলোর সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, শরীরের কোন কোন স্থানে দাদ রোগ হয় সেই সম্পর্কে জেনে নেই।

শরীরের কোন কোন স্থানে দাদ রোগ হয়?

আমাদের মানবদেহের যেকোনো স্থানে দাদ হতে পারে। যেমন: মাথার ত্বক, বিভিন্ন কুঁচকিতে, হাত, পা, হাত-পায়ের নখ ও পায়ের পাতা ইত্যাদি।

মাথার ত্বকে: মাথার ত্বকে দাউদ আক্রান্ত হলে মূলত আক্রান্ত স্থানে চুল পড়ে যায়। চুল পড়া অংশে গোলাকার, লালচে, ও ছোটো ছোটো আঁইশযুক্ত র‍্যাশ বা ফুশকুড়ি তৈরি হয়। এতে চুলকানিও হতে পারে। মাথার ত্বকের দাদ রোগের ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা দেয়।

পা ও পায়ের আংগুলের ফাঁকে:  আবার যদি পায়ে দাদ হয় তাহলে পায়ের পাতা ও গোড়ালিও আক্রান্ত হতে পারে। কিছু গুরতর ক্ষেত্রে পায়ের ত্বকে ফোস্কাও পড়তে দেখা যায়।

কুঁচকিতে: শরিরের কুঁচকিতে দাউদ হলে সেটি সাধারণত পুরুষের উরুর ভেতরের দিকের ভাঁজে লাল লাল র‍্যাশ বা ফুশকুড়ি হিসেবে দেখা যায়। সেই র‍্যাশে চুলকানি হয় এবং আঁইশ থাকে।

দাঁড়িতে: গলার ওপরের অংশে অর্থাৎ দাড়িতেও এই ধরনের রোগ দেখা দেয়। এটিও লাল ফুশকুড়ি হিসেবে দেখা যায়, এতেও আঁইশ এবং চুলকানি হয়। দাঁড়িতে দাদ হলে অনেক সময় ফুশকুড়ির উপরে চলঠা পড়ে যায়। আবার একই সাথে আক্রান্ত স্থানে চুল বা লোম পড়ে যেতে পারে।

আক্রান্ত স্থানভেদে দাদের লক্ষণেও কিছু কিছু ভিন্নতা হতে পারে। যেমন, র‍্যাশ বা ফুশকুড়ির আকারে ভিন্নতা থাকতে পারে। দাদের র‍্যাশ ধীরে ধীরে বড় হয়ে ছড়িয়ে যেতে পারে। আবার কিছু কিছু সময়ে এক বা অকাধিক র‍্যাশ বা ফুশকুড়ি দেখা দিতে পারে।

দাদ রোগ কীভাবে ছড়ায়?

এ পর্যায়ে আমরা দাদ বা দাউদ রোগটি কিভাবে ছড়ায় সেটি জেনে নিব। আমরা জানি দাদ হচ্ছে একটি সংক্রামক রোগ। এটি মাইক্রোস্পোরাম (Micro Sporum), ট্রাইকোফাইটন (Trichophyton), ও এপিডার্মোফাইটন (Epidermophyton) প্রকারের ফাঙ্গাস জাতীয় জীবাণুর মাধ্যমে সংক্রামণ ঘটায়। এটি সাধারনত ৩ ভাবে ছড়ায় যথা-
  • দাদ বা দাউদ রোগের জীবাণু রয়েছে এমন পরিবেশ থাকলে, বিশেষ করে স্যাঁতস্যাঁতে স্থান থেকে।
  • দাদ রোগে আক্রান্ত কোনো প্রাণীর সংস্পর্শ থেকেও যেমন- গরু, বিড়াল, ছাগল,  ও কুকুর ইত্যাদি।
  • রোগীর কিংবা তার ব্যবহারকৃত জিনিসের সংস্পর্শ থেকে। যেমন: তোয়ালে বা গামছা, চিরুনি, ও বিছানার চাদর ইত্যাদি।

দাউদ রোগের ৫টি ঘরোয়া চিকিৎসা

দাদ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনেক ধরনের মলম ও ওষুধ রয়েছে। এরপরেও আপনারা এই রোগটি একেবারে ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে দূর করতে পারবেন। দাদ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা করার বেশ কয়েকটিগুলো উপায় রয়েছে। তবে আপনাকে অবশ্যই ঘরোয়া চিকিৎসার উপকরণ গুলো সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। দাউদ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা নিম্নে আলোচনা করা হলো-

নিমের পাতা: দাদের ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে নিমের পাতা অনেক কার্যকরী। এক্ষেত্রে নিমের কচি পাতা বেটে আক্রান্ত স্থানে লাগালে অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

তুলসী পাতা: তুলসী পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ও আন্টিফাঙ্গাল উপাদান roye। যা আমাদের শরীরের দাউদ বা দাদের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও তুলসী পাতা আমাদের শরীরে চুলকানি ও র‌্যাশ দূর করে। তাই দাউদের সমস্যায় তুলসী পাতার ভূমিকা অপরিসীম।

কাঁচা হলুদের রস: দাউদের সমস্যা দূর করার জন্য ঘরোয়া উপাদান হিসেবে কাঁচা হলুদের রস অনেক উপকারী। কেননা, কাচা হলুদের রয়েছে আন্টিফাঙ্গাল (Antifungal) ও অ্যান্টিসেপটিক (Antiseptic) নামক উপাদান। যেটি দাউদের সংক্রমণ রোধ (Prevention of infection) করতে সহায়তা করে।

নারকেল তেল: এছাড়াও নারকেলের তেলের মধ্যে য়াছে মাইক্রোবিয়াল (Microbial) এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল (Antifungal) নামক বিশেষ উপাদান যা দাদ রোগের সংক্রমণ রোধ করতে সহায়তা করে থাকে। এর ব্যবহারে প্রথমে আপনাকে একটি পাত্রে নারকেলের তেল সামান্য গরম করে নিতে হবে। তারপর এই গরম তেল আক্রান্ত জায়গায় লাগিয়ে দিতে হবে তাহলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

রসুন: রসুনের মধ্যে অ্যাজুইনা নামক এক ধরনের প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে যেটি ছত্রাকজনিত রোগ দাদ কমাতে সাহায্য করে। এটি ব্যবহার করার করতে এক থেকে দুই কোয়া রসুন ভালোমতো থেতলে নিতে হবে।

তারপরে তার সাথে ৩ থেকে ৪ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ও ৩ থেকে ৪ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে আক্রান্ত জায়গায় প্রতিদিন লাগাতে হবে। এভাবে থতলানো রসুন লাগানোর পর কয়েক ঘন্টা রেখে দিতে হবে। তারপরে আক্রান্ত স্থানটি গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। আশা করছি, বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।

দাদ হলে যেসব খাবার খাওয়া যাবে না

দাদ বা দাউদ নামক এই রোগটি সত্যিই একটি অস্বস্তিকর একটি রোগ। এমনকি অনেক চিকিৎসা করার পরেও এই রোগ সম্পূর্ণরূপে দূর নাও হতে পারে। এর একটি অন্যতম কারন হচ্ছে আক্রান্ত ব্যক্তি দাদ থাকলে কখনও কখনও এমন খাবার খায় যা তাদের খাওয়া উচিত নয়।

সেগুলো খাবার খেলে দাদ রগ থেকে মুক্তি পাওয়া অনেক জটিল হয়ে যায়। তাই দাদ বা দাউদ হলে কী খাবার খাওয়া যাবে না সেটি জেনে নেওয়া জরুরি। তাহলে আসুন, দাদ হলে যেসব খাবার খাওয়া যাবে না সেগুলো জেনে নিই।
  • গরুর মাংস
  • ইলিশ মাছ
  • শুটকি মাছ
  • চিংড়ি মাছ
  • কচু
  • বেগুন
  • ফুলকপি
  • ফাস্ট ফুড
  • ভাজাপোড়া খাবার
  • চিনিযুক্ত খাবার
যারা দাদ থেকে চিকিৎসার পরেও এই রোগ থেকে রেহাই পাচ্ছে না তারা উপরে দেওয়া উল্লেখিত খাবার গুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। আর দাদ সম্পূর্ণভাবে ভালো না হওয়া পর্যন্ত এই খাবারগুলো খাওয়া যাবে না। তাহলে ভালো চিকিৎসা নিলে আশা করছি অতি দ্রুত এই রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।

দাদ রোগে যা যা করবেন

আসুন, এবার আমরা জেনে নিব দাদ রোগে যা যা করবেন। দাদ রোগ হলে বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। তা নাহলে যে ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত তার জন্যে অন্য কারো এই রোগের সংক্রমণ ছড়াতে পারে। আবার যার এই রোগ হয়েছে সেই যদি সচেতন না থাকে, তাহলে তার শরীরে এ রোগ ভালো না হয়ে বরং জটিলতা বাড়তেই থাকবে।
  • প্রথমত আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বক সবসময় শুকনো ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আক্রান্ত ত্বক সংস্পর্শে আসলে সাথে সাথে হাত ধুয়ে ফেলার চেষ্টা করুন বা হ্যন্ডওয়াশ দিয়ে ধুলে বেশি ভালো।
  • আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতিদিন ব্যবহারের কাপড় (যেমন: তোয়ালে বা গামছা ও বিছানার চাদর এবং পড়নের কাপড়) নিয়মিত ফুটন্ত পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
  • এই রোগের লক্ষণ দেখা দিলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করুন।

দাদ রোগে যা যা করবেন না

উপরে দাদ রোগে যা যা করবেন সেগুলো আলোচনা করেছি। আশা করছি, আপনারা জেনে নিয়েছেন। আবার আসুন, দাদ রোগে যা যা করবেন না সেগুলো সংক্ষেপে জেনে নেই।
  • দাদ রোগে আক্রান্ত কোন ব্যক্তির ব্যবহারকৃত জিনিসপত্র (যেমন: গামছা বা তোয়ালে, চিরুনি ও বিছানার চাদর)  এসব জিনিস অন্যরা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • রোগিরা আক্রান্ত স্থানের ত্বক স্পর্শ করা অথবা বার বার চুলকানো যাবে না। তা নাহলে দাদ বা দাউদ শরীরের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কারন এই রোগ সংক্রমণ হওয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে যায়।
  • এমনকি বার বার চুলকানোর কারণে ত্বকে ভিন্ন আরেকটি জীবাণু আক্রমণ করে ইনফেকশন সৃষ্টি করতে পারে, যা দাদের চিকিৎসাকে আরও বেশি জটিল হয়ে যাবে। তাই আক্রান্ত স্থান যতই চুলকাতে মন চাক না কেন বার বার চুলকানো থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।

দাদ রোগের জটিলতা কি

দাদ রোগে সঠিকভাবে চিকিৎসা না নিলে এই রোগে কিছু জটিলতা রয়েছে যেগুলো জেনে নেওয়াটাও জরুরি যেমন-
  • কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় দাদ ভালো হয়ে যাওয়ার পরেও আক্রান্ত স্থান বা ত্বকে দাগ থেকে যায়।
  • দাদ রোগ নখে হলে নখের কিছু সাধারন পরিবর্তন (যেমনঃ ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, নখে লম্বা গাঢ় দাগ হওয়া, নখ হলুদ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।) দেখা দিতে পারে।
  • দাদ রোগে সঠিক বা পরিপূর্ণভাবে চিকিৎসা না করালে সেরে উঠে না বরং দেহের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারও যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয়, তাহলে এমনটা হওয়ার ঝুঁকি আরও বেশি বেড়ে যায়।
  • আক্রান্ত জায়গাটি বার বার চুলকানোর কারনে ত্বকে ফাটল দেখা দিতে পারে। এই ফাটল দিয়ে ব্যাকটেরিয়াগুলো প্রবেশ করে নতুনভাবে ইনফেকশন তৈরি করে দাদকে আরও বেশি জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তখন ত্বকের আক্রান্ত জায়গাটি গরম ও লাল হয়ে যায়, ব্যথা হয় ফুলে ওঠে এবং কিছু কিছু সময় পুঁজও বের হতে পারে।

যেসব ক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে যাওয়া জরুরি

দাদ বা দাউদ রোগে যেসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যাওয়াটা জরুরি আসুন এবার আমরা সেই বিষয়ে জেনে নিব। 
  • যদি কোনো কেমোথেরাপি কিংবা স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ ব্যবহার ও ডায়াবেটিস ইত্যাদি ব্যবহার করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
  • বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আক্রান্ত স্থানে অ্যান্টিফাঙ্গাল (Anti-Fungal) ঔষধ ব্যবহারের পরেও এই রোগের কোন উন্নতি না হলে।
  • মাথায় ত্বকে দাদ দেখা দিলে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ১ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত মুখে খাওয়ার ঔষধ এবং শ্যাম্পু ব্যবহার পরেও যদি কোন উন্নতি না হয়ে আরও বেশি জটিলতা সৃষ্টি হয় তাহলে পুনরায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

দাদ সারাতে স্টেরয়েড মলম বা ক্রিম ব্যবহার করা যাবে?

দাদ বা দাউদ সারাতে স্টেরয়েড মলম বা ক্রিম ব্যবহার করা যাবে কিনা এর সঠিক তথ্যটি হয়তো অনেকেই জানেন না। আসুন, আমরা সেই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিই।

দাদ বা দাউদ রোগে ফুশকুড়ি দেখা দিলে আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা স্টেরয়েড জাতীয় মলম বা ক্রিম ব্যবহার করে থাকি। এটা একেবারেই উচিত না। কারণ, এসব মেডিসিন চুলকানি ও ত্বকের লালচে ভাবগুলো কমাতে সহায়তা করলেও, দাদ সৃষ্টিকারী জীবাণুর হাত থেকে পুরোপুরি রক্ষা করতে পারে না।

যার ফলে, এসব ক্রিম ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও দুর্বল করে ফেলে। এজন্য দাদ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমনকি ইনফেকশন ত্বকের অনেক গভীরে প্রবেশ করে নানান জটিলতা সৃষ্টি করার সম্ভাবনা থেকে যায়।

এছাড়াও কোনো কোনো সময়ে স্টেরয়েড জাতীয় মলম বা ক্রিম দাদের ধরনও পরিবর্তন করে দেয়। যার ফলে একজন চিকিৎসকের জন্য সঠিকভাবে দাদ নির্ণয় করা কঠিন হয়ে যায়। তাই দাদের চিকিৎসায় ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে এই ধরনের ক্রিম ব্যবহার না করাই উত্তম। আশা করছি, বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।

দাউদের সবচেয়ে ভালো মলম কোনটি

দাউদের সবচেয়ে ভালো মলম কোনটি বিষয়ে অনেকেই জানতে চায়। চলুন, দাদ রোগের সবচেয়ে ভালো কার্যকরী কিছু মলমের নাম জেনে নেই। দাউদের সবচেয়ে ভালো মলমের নাম নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
  • Tenafin
  • Ketoconazole
  • Clotrimazole
  • Miconazole
  • Terbinafine
  • Fungidal cream
  • Eberconazole cream
  • Lulizol Cream
  • Lucazol cream
  • Mycofin cream
  • Lulitop Lulinox cream

দাউদের সবচেয়ে ভালো সাবান বা শ্যাম্পুর নাম ও দাম

এবার আমরা দাদের সবচেয়ে ভালো সাবান ও শ্যাম্পুর নাম ও দাম জেনে নিব। দাদ রোগের ক্ষেত্রে এইগুলো অনেকে উপকারে আসবে। চিকিৎসকরাও দাদ রোগ দেখা দিলে এসব সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহার করতে বলে থাকে। তাই আপনাদের সুবিধার জন্য নিচে দাদের সবচেয়ে ভালো সাবান ও দাম উল্লেখ করা হলো।
  • কিটোকোনাজল (Ketoconazole) ৭৫ গ্রাম (৪৮৪.০০ টাকা)
  • কিটোকোনাজল (Ketoconazole) ৫০ গ্রাম (৪৫০.০০ টাকা)
  • লুলিকোনাজল (Luliconazole)  ৫০ গ্রাম (২০৮.০০ টাকা)
  • লুলিকোনাজল (Luliconazole) ৭৫ গ্রাম (৬১৭.৫০ টাকা)
  •  ASSURE ৫০ গ্রাম (১০০.০০ টাকা)
  • ASSURE ৭৫ গ্রাম (১০০.০০ টাকা)

লেখকের শেষকথা

পরিশেষে যে কথাটি না বললেই নয়, আপনি যদি কোন ধরনের ক্রিম বা ওষুধ ব্যবহার করার চিন্তা করেন তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটা জরুরি। সঠিক পথ অনুকরন করলে সবসময় ভালো ফল পাওয়া যায়। প্রিয় পাঠক, আমরা ইতিমধ্যে দাউদ রোগের ৫টি ঘরোয়া চিকিৎসা - দাদ রোগের লক্ষন সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে উপরে আলোচনা করেছি।

আশা করছি, আপনারা এতক্ষণে দাউদ রোগের ৫টি ঘরোয়া চিকিৎসা - দাদ রোগের লক্ষন কি সেটি জানতে ও বুঝতে পেরেছেন। আশা করি, আপনারা উল্লেখিত বিষয়ে জেনে উপকৃত হয়েছেন। আপনি যদি এই পোষ্টের কোন অংশ বুঝে না থাকেন, তাহলে এই পোষ্টের কমেন্ট সেকশনে জানিয়ে দিবেন। তাহলে, আমরা সেই অংশটুকু ভালোভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।

দাউদ রোগের ৫টি ঘরোয়া চিকিৎসা - দাদ রোগের লক্ষন সম্পর্কিত আমাদের এই পোষ্টটি আপনার যদি পছন্দ হয়ে থাকলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। এতে অন্যরাও উল্লিখিত বিষয়গুলো জানতে পারবেন। এতে তারাও উপকৃত হতে পারবেন। এ ধরণের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য পেতে এবং আরও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকার অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ।

Share this post (এই পোস্ট শেয়ার করুন)

See previous post (আগের পোস্ট দেখুন) See next post (পরবর্তী পোস্ট দেখুন)
No one has commented on this post yet (কেউ এখনও এই পোস্টে মন্তব্য করেনি)
Click here to comment (মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন)

Comment in accordance with Help Crown's Privacy Policy. Every comment is reviewed.

Help Crown - গোপনীয়তা নীতি অনুসারে মন্তব্য করুন। প্রতিটি মন্তব্য পর্যালোচনা করা হয়.

comment url